সৃষ্টির আদিতে মানবজাতি মূলত ছিল প্রকৃতি নির্ভর। কালের আবর্তে নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে আধুনিক সভ্য মানুষের সৃষ্টি। মানবজাতির উন্নয়নের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যখনই শিক্ষার প্রসার ঘটেছে তখনই উন্নয়ন দ্রুত বেগবান হয়েছে। কাজেই ইতিহাসের আলোকে আমরা বলতে পারি শিক্ষা উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মিশনারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। উন্নত জাতি গঠন, শিক্ষার্থীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার মহান লক্ষ্য এবং সেবামূলক মনোভাব নিয়ে ১৯১২ সালে ঢাকার লক্ষীবাজারে গড়ে ওঠে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। খ্যাতি, মর্যাদা, চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষিতে এবং শিক্ষার্থীদের অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর মনোভাব নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের গন্ডি পেরিয়ে গতবছর (২০১৭) প্রতিষ্ঠানটি কলেজ শাখায় উন্নীত হয়। বাংলাদেশে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষা বিস্তার তথা শিক্ষার্থীদের স্বর্ণোজ্জ্বল শিক্ষাজীবন গড়ার মহান কাজে শতভাগ নির্ভেজাল অবদান রেখে চলেছে তন্মধ্যে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্যতম।
প্রতিষ্ঠানটি গত ০১.০৯.২০১৮ খ্রি: তারিখে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির নবীন বরণ উৎসবের আয়োজন করে। উক্ত দিনের প্রভাতে নবীন ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয় স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণ। সৃষ্টি হয় এক আনন্দঘন পরিবেশের। বাদ্য বাজিয়ে, ফুল বর্ষণের মাধ্যমে নবীন ছাত্রীদের বরণের এ যেন এক ব্যতিক্রম প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সি.এস.সি, সভাপতি, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডি। বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড সি.এস.সি, অধ্যক্ষ, সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজ। সভাপতির আসনে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম এবং সহ-সভাপতির আসনে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ সিস্টার মায়া গেট্রুড রোজারিও, আর.এন.ডি.এম। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি মো: জাহিদুল ইসলাম, মালতী ক্লারা কস্তা এবং প্রতিষ্ঠানের কো-অডিনেটর সিস্টার কার্মেল রিবেরু, আর.এন.ডি.এম সহ প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিস্টার মেরী আলো পালমা স্বাগত বক্তব্যে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্রিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা সত্যকে সমর্থন করে সত্যের পথে থাক। সাধনা ও পরিশ্রম করে জ্ঞান অর্জন কর। আমাদের বিশ্বাস তোমাদের পিতামাতা তোমাদের সুন্দর মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের কাছে তুলে দিয়েছেন। আমরা তোমাদের সুন্দর মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। এখন নিজেকে প্রস্তুতের সময়। তোমরা নিজেকে প্রস্তুত কর। কৃষকের ফসল ফলানোর ন্যায় আমরা তোমাদের গড়ে তুলতে চাই, যেন তোমরা পরিপক্ব ও স্বাধীন মানুষ হতে পার।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সি.এস.সি নবীন ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘জ্ঞানের আলোতে তোমরা এসেছ, যেখান থেকে শত বছর যাবৎ জ্ঞান বিতরণ করা হচ্ছে। সিস্টারগণ এবং শিক্ষকমুন্ডলী জ্ঞানের আলো বিতরণ করছেন। তোমাদের জন্য এখন আবিষ্কারের সময়। তোমরা জ্ঞানের দিক দিয়ে, শিক্ষার দিক দিয়ে নিজেদের আবিষ্কার করছো। সুন্দর মানুষ ও উপযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে তোমরা নিজেদের গড়ে তোল।’ মিশনারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘মিশনারী প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা। এখানে একটি সুন্দর পরিবেশে তোমরা গড়ে ওঠতেছ। নিয়ম-নীতি, শৃঙ্খলা, আধুনিকতা, সততা ও শুদ্ধাচারের সমারোহ এখানে।’
প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ সিস্টার মায়া গেট্রুড রোজারিও, আর.এন.ডি.এম অনুষ্ঠানে আর.এন.ডি.এম সিস্টারদের সংঘের প্রতিষ্ঠানেত্রী ইউফ্রেজীর কর্ম ও জীবন স্মরণ করে তাঁর সততা, আদর্শ ও নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তিনি একজন সত, যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানুষ ছিলেন। তোমরা তাঁর মত আদর্শবান, নিষ্ঠাবান, যোগ্য ও দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠো।’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা পরিশ্রম করবে। আমাদের লক্ষ্য সুন্দর মানুষ গড়ে তোলা। আমরা সেই সুন্দর মানুষ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’ সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড সি.এস.সি মিশনারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম ও মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অমর্তসেন, পদ্মা ব্রীজের মূল স্থপতি ও জাতীয় অধ্যাপক হিসাবে ঘোষিত জামিলুর রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির প্রধান ড. কামাল হোসেন, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করেন, যারা সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এছাড়া মিশনারী প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যয়ণ করে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি মিশনারী প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে সকল শিক্ষক ও ছাত্রীদের আহ্বান জানান।
শিক্ষক প্রতিনিধি মো. জাহিদুল ইসলাম ভাষা, শ্রদ্ধাবোধ ও ধর্মের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা ভাষার প্রতি যতœশীল হবে। উচ্চারণ ও শব্দচয়ণ যথাযথ হতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে, বড়দের সম্মান করবে। ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। নিজেদের ধর্ম ভালোভাবে জানবে, বুঝবে। শুধু পাঠ্য বই পড়ে ধর্ম ভালোভাবে বুঝা যায় না। ধর্মের প্রতি যার শ্রদ্ধা থাকে সে কখনো উশৃঙ্খল হতে পারে না, অন্যকে আঘাত করতে পারে না, কাউকে ঠকাতে পারে না। তোমাদের ইউনিফর্ম তোমাদের অন্যদের থেকে আলাদা করবে। এ বিষয়ে তোমরা সতর্ক থাকবে।’ উল্লেখ্য, নবীন বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।