১৯১২ সালে সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স নামক এক সাধু প্রভু যীশুর বাণী প্রচারের জন্য যখন স্পেন থেকে ভারত এবং ভারত থেকে চীনে যাচ্ছিলেন সেই সময় পথিমধ্যে তিনি দেহ ত্যাগ করলেন। তাঁর এই ধর্ম প্রচারের মহৎ প্রচেষ্টাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশে, তাঁরই নামে এই উপমহাদেশের অন্যান্য ধর্ম যাজকদের উদ্যোগে বুড়িগঙ্গার মনোরম তীরে (৮৫, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, ঢাকা-১১০০) ১৯১২ সালে স্থাপিত হলো সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল। প্রাথমিকভাবে ৪ জন শিক্ষিকা ও ৬০ জন ছাত্রী নিয়ে ভীরুপায়ে এই বিদ্যাপিঠের যাত্রা।
১৯৭২ সালে বিদ্যালয়ে জায়গার সংকুলান তথা অধিকাংশ ছাত্রীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়ায় বিদ্যালয়কে দুইটি ভাগে বিভক্ত করে ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলটি মোহাম্মদপুরে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। অপরদিকে বাংলা শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে আদি স্কুল লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল নামে পরিচালিত হতে থাকে। জুনিয়র স্কুল অর্থাৎ ১ম-৮ম শ্রেণি পর্যন্ত স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৭৭ ইং সালে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা ০১/০১/১৯৭৯ ইং সালে অত্র বিদ্যালয়কে ৯ম শ্রেণি খোলার স্থায়ী অনুমতি দান করে। তখন থেকেই সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাইস্কুল নামে পরিচিতি লাভ করে। চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষিতে এবং শিক্ষার্থীদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর মনোভাব নিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজ শাখায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যথাক্রমে সিস্টার নিলু মৃ, আর.এন.ডি.এম ও সিস্টার গ্রেসী গমেজ, আর.এন.ডি.এম।
শতবর্ষব্যাপি প্রতিষ্ঠানটি আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে লক্ষ প্রাণে। সেই আলোয় উদ্ভাসিত তরুন প্রাণ খুঁজে পেয়েছে তাদের জীবনে পথের দিশা। তাইতো এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী দেশ মাতৃকার সুমহান সেবায় নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এক একটি উজ্জ¦ল নক্ষত্র। বয়ে এনেছে দেশ ও জাতির জন্য অনেক দূর্লভ সম্মান। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তারা দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। দেশের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনায় তারা নিজেদের উৎসর্গ করে আসছে। সমুন্নত রেখেছে লাল সবুজের পতাকার মান ও গৌরব।
শিক্ষার্থীদের জীবন আলোকিত করতে, শিক্ষার্থীদের সম্মুখপানে অগ্রসর হতে সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষক, অফিস স্টাফ ও সহায়তাকারী দাদা দিদিগণ নিরলস কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্কুল ও কলেজ শাখায় প্রায় ৭৫ জন শিক্ষক, ৪ জন অফিস স্টাফ ও ২০ জন সহায়তাকারী প্রতিনিয়ত প্রায় ৩০০০ শিক্ষার্থীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। খ্যাতি, মর্যাদা ও জনপ্রিয়তার মধ্যদিয়ে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে এসে ১১০ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠানের কতিপয় বৈশিষ্ট্য-
> প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ইউনিফরম রয়েছে।
> স্কুল পর্যায়ে শুধু প্রথম শ্রেণিতে লটারীর মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয়। তবে বিভিন্ন ক্লাসে আসন খালি হওয়া সাপেক্ষে জানুয়ারী মাসে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয়।
> শিক্ষার্থীদের নিয়মিত এ্যাসেম্বলীতে অংশগ্রহণ করতে হয়।
> বিদ্যালয়ে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।
> প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪টি সেকশনে পাঠদান করা হয়।
> ছাত্রীদের যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম। জেভেরিয়ান ডিবেটিং ক্লাব, জেভেরিয়ান বিজ্ঞান ক্লাব, জেভেরিয়ান ইংরেজি ক্লাব, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ম্যাগাজিন প্রকাশ, বিজ্ঞান মেলা, দেয়ালিকা প্রদর্শন, হস্তশিল্প প্রদর্শন, ক্লাসপার্টি, পিঠা উৎসব, রচনা, হাতের লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নারী দিবস, শিশু দিবস, শিক্ষকদিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
> সকাল ৭:৩০টা থেকে বিকাল ৪:৩০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।
> ছুটির পর অভিভাবকদের না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে নিরাপদে রাখা হয়।
> প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
> শ্রেণি ও সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এই সভার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর মূল্যায়ণপত্র অভিভাবককে দেয়া হয়।
> একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি নেয়া হয়।
> নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয়।
> মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া হয়।
> প্রতিষ্ঠানে একটি ক্যান্টিন রয়েছে।
> বিদ্যালয়ে এসে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
> বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রয়েছে।
> প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে।
> নিয়মিত শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা রয়েছে ।
> নবীন বরণ, বিদায় অনুষ্ঠান ও সংবর্ধনা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে এ প্রতিষ্ঠান।
> দুর্বল ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
> পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অত্যন্ত স্বচ্ছতারসাথে শিক্ষক নিয়োগ করা এবং
> বাৎসরিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করলে টি.সি. দেয়া হয়।
প্রতিবছর শতভাগ পাশসহ সন্তোষজনক ফলাফলের দৃষ্টান্ত রাখে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কালক্রমে প্রতিষ্ঠানের সুনাম, মর্যাদা ও খ্যাতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমিত সংখ্যক আসনে ভর্তিতে বছরের প্রথমে শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। সমাজজীবন থেকে নিরক্ষরতার অন্ধকার দূর হোক। সকলের জীবনে শিক্ষার আলো উদ্ভাসিত হোক, এ লক্ষ্য নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।